মার্চ ২৯, ২০২৪

সমাধির অপেক্ষায় রয়েছে দুই হাজারের অধিক কফিনবন্দি মরদেহ। ইতালির রাজধানী রোমে কফিনগুলো প্রায় দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে পড়ে আছে। মৃতদের যথাযথ আত্মীয়স্বজন এবং কাছের লোকদের সিদ্ধান্তহীনতার জন্য তাদের সমাহিত করতে পারছেন না সৎকার কর্মীরা। তাই প্রতিবাদ করেছেন তারাও।

গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) রোমে অনুষ্ঠিত হয় সৎকার কর্মীদের এ প্রতিবাদ কর্মসূচি।

লাশঘরের সংরক্ষণ কর্মীরা রোমের মেয়র ভার্জিনিয়া রাগির অফিসের কাছে টেম্পল অব হারকিউলিস ভিক্টরের চারপাশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। প্রতিবাদ নোটিশে তারা লিখেছিলেন, দুঃখিত তারা আমাদের আপনাকে কবর দিতে দেবে না।

সৎকার কর্মীদের রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সেক্রেটারি ক্যাকসিওলির মতে, রাজধানী রোমে প্রতিবছর গড়ে ১৮ হাজার মানুষ কবরের জন্য আবেদন করে। যার জন্য পরিবারগুলোকে স্থানীয় কবরস্থান, পৌরসভার এএমএস এবং রেজিস্ট্রার অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। এতে সময় ও বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। যাকে তিনি আমলাতান্ত্রিক অত্যাচার বলে মনে করেন।

গেল সপ্তাহের শুরুর দিকে এক মায়ের ছেলে যার নাম ওবারদান জুকারোলি রোমের চারপাশের বিলবোর্ডে একটি বার্তা লাগিয়ে অত্যন্ত মর্মান্তিক প্রচারণা চালান। যাতে প্রতিবাদের স্বরে লেখা ছিল, ‘মা দুঃখিত আমি আপনাকে এখনও সমাধিস্থ করতে পারিনি।’ এ সব ঘটনা প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা বাড়িয়ে তোলে।

স্বামীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যু হয় গত জানুয়ারিতে। এখন পর্যন্ত পৌরসভা থেকে কবরস্থানের জন্য অপেক্ষায় আছেন স্ত্রী লরেনা পেসারেসি। রোমের পৌরসভার মরদেহ সমাধিস্থ করতে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ দিন সময় লাগে বলে জানান সেক্রেটারি ক্যাকসিওলি; যা অনৈতিক ও অমানবিক।

অনেক সময় স্থানীয় চার্চ ও সৎকার কর্মীরা মৃত ব্যক্তির সৎকার না করে তার ব্যক্তিগত সম্পদের খোঁজে সময় ব্যয় করেন। অনেক ক্ষেত্রে বিশাল সম্পত্তির হদিস পাওয়া যায়। যে সম্পত্তি স্থানীয় চার্চের হস্তগত হয়। সৎকার কর্মীরা মরদেহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাফন সম্পন্ন করতে চাইলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা সম্ভব হয় না।

পরিবারগুলোর আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে বা কবরস্থান ক্রয় করা না থাকলে সৎকারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। ইতালির রাজধানী রোমের বাইরে মরদেহ সমাধিস্থ করতে জটিলতা থাকলেও সময় লাগে অনেক কম। রোমের সৎকার কর্মীরাও চান এ সমস্যার সমাধান।

এদিকে রাজধানী রোমে প্রায় ২৫ হাজারেরও অধিক বাংলাদেশি প্রবাসী বসবাস করেন। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মানুষেরও মৃত্যু হয়। অধিকাংশ মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো হলেও করোনা পরিস্থিতিতে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে রোমের কবরস্থানে। বিশেষ পরিস্থিতিতে ঝামেলা কম হলেও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যথেষ্ট দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। তাই কমিউনিটির ব্যক্তিরা কেউ কেউ এগিয়ে এসেছেন মুসলিম কবরস্থান নির্মাণে। বাংলাদেশ দূতাবাসও নিতে পারে বিশেষ ভূমিকা। মৃত্যুর পর রাজধানী রোমে সমাধিস্থল নির্ধারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান হোক-এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও।