মার্চ ২৯, ২০২৪

ভারতে করোনা সংক্রমণ কমছেই না। মঙ্গলবারই করোনায় মৃত্যুতে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে দেশটি। এর একদিনের মাথায় বুধবার দৈনিক সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে ভারত। এদিন সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আরও দুই লাখ ৯৫ হাজার ৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো এক কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ১৩০। এক দিনে আক্রান্তের নিরিখে এই সংখ্যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। কোনও একটি দেশে একদিনে আক্রান্তের নিরিখে এই সংখ্যাই এত দিন সর্বোচ্চ ছিল। বুধবার সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে নতুন রের্কড তৈরি করেছে ভারত।

দৈনিক মৃত্যুর নিরিখেও বুধবার নতুন রের্কড করেছে ভারত। দেশটিতে এই প্রথম একদিনে মৃত্যু দুই হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২৩ জনের। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক লাখ ৮২ হাজার ৫৫৩ জন।

বিপুল সংখ্যক দৈনিক শনাক্তের জেরে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সক্রিয় রোগী বেড়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৬১। বর্তমানে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৮। যদিও এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশে এ সংখ্যা দেড় লাখেরও নিচে নেমে গিয়েছিল। তারপর বাড়তে বাড়তে গিয়েছে এই পরিস্থিতিতে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার পরিসর ক্রমেই কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই শয্যায় একাধিক রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। অক্সিজেনের অভাব সামাল দিতে মাঠে নেমেছে প্রশাসনও। অনেক জায়গাতেই অস্থায়ী কোভিড কেয়ার কেন্দ্র তৈরি করে পরিস্থিতি মোবাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার।

সংক্রমণ শৃঙ্খল রুখতে লকডাউনও জারি হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। রাজধানী দিল্লিতে সোমবার থেকে চলছে লকডাউন। মহারাষ্ট্রেও ‘করোনা কারফিউ’ চলছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে সপ্তাহান্তে চলছে লকডাউন। রাত্রিকালীন কারফিউ জারি হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে। এর পাশাপাশি জোরেশোরে চলছে টিকাদান কর্মসূচি।

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে টিকা নিয়েছেন ২৯ লাখ ৯০ হাজার ১৯৭ জন। এ নিয়ে মোট কোভিড টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে ১৩ কোটি এক লাখ ১৯ হাজার ৩১০টি।

এদিকে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে লকডাউন থেকে দেশকে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, লকডাউন এখন কোনও বিকল্প নয়। মানুষের জীবন ও জীবিকা দুটি বিষয়ের কথাই মাথায় রাখতে হবে। লকডাউন থেকে দেশকে বাঁচাতেই হবে। রাজ্য সরকারগুলোকে বলব লকডাউনকে তারা যেন শেষ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেন। বরং অগ্রাধিকার দিতে হবে মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জোন তৈরি করে কোভিড মোকাবিলায়।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই যদি কোভিড প্রটোকল মেনে চলি, সহিষ্ণুতা ও সংযম বজায় রাখি, বিনা কারণে বাড়ি থেকে বের না হই, তাহলে লকডাউনের প্রশ্নই নেই। আমি আমার তরুণ বন্ধুদের বলব তারা যেন এই ব্যাপারটা সামাজিক মিশনের মতো গ্রহণ করেন। পরিবারের সদস্যদের পরিজনদের তারা যেন বোঝান যে বিনা কাজে, বিনা প্রয়োজনে কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যায়।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যে একেবারে ঝড়ের মতো আছড়ে পড়েছে তা স্বীকার করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে বলেছেন, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অযথা যাতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মানুষকে আরও সতর্ক, আরও সচেতন হতে হবে।

মোদি ভাষণে উল্লেখ করেছেন, কোভিড মোকাবিলা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। কেবল কেন্দ্রের সরকারেরও নয়। এখানে রাজ্য সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সমাজের প্রতিটি মানুষের অংশীদারিত্ব রয়েছে। প্রত্যেকে তার নিজের অংশটুকু দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে পারলে এই ঝড়ও কেটে যাবে।