এপ্রিল ১৯, ২০২৪

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকার এক পরিবারের দুইজন নারী ও সাত শিশু নিহত হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ভোররাতে গাজার আল শাতি শরনার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। হামলায় ওই শরনার্থী ভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর সকালে ওই শরনার্থী শিবিরে যায় ফিলিস্তিন সরকারের উদ্ধারকারী বাহিনী। সেখানে ভবনের ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে একে একে উদ্ধার হয় এই দুই নারী ও সাত শিশুর মরদেহ। উদ্ধারকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ধ্বংসস্তুপের ভেতরে আরো বেশ কিছু মৃতদেহ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে টানা ছয়দিন ধরে চলা সংঘাতে জীবন বাঁচাতে ইতোমধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে শরনার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছেন সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিকরা। দেশটির সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক এই সংঘাত শুরু হয় গত ৯ মে, রোববার রাত থেকে। ওই দিনের রাতটি ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) রাত।

গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের (সেটলার) অবৈধ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ৯ মে রাতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।

এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।

ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। সেই হামলা এখনও অব্যাহত আছে। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।

এদিকে, হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে। শুক্রবার ভোর রাত থেকে বিমান হামলার পাশাপাশি গাজার বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে গোলা বর্ষণও শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলা ও গোলা বর্ষণে ইতোমধ্যে গাজায় মারা গেছেন ১৩৭ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু রয়েছেন।