অক্টোবর ১৫, ২০২৪

ক্যাঙ্গারুর পর এবার কিউই পাখি শিকার। বাঘের থাবা থেকে রেহাই মিলছে না কারোরই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইতিহাসগড়া সিরিজ জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নিউজিল্যান্ডকেও নাকানি চুবানি খাওয়ালো টাইগাররা, গড়লো আরেকটি ইতিহাস।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে জয়ই ছিল না। সেই দলটিকেই ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। একই পরিণতির অপেক্ষায় এবার কিউইরা।

এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টিতে জয় অধরা ছিল। সেই জয়খরা কাটানো হয়েছিল আগেই, এবার এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজও নিশ্চিত করে নিলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

মিরপুরে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৬ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে এখন তারা এগিয়ে ৩-১ ব্যবধানে। সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি শুক্রবার।

আগের ম্যাচে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৭৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা। এবার তাই ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার লিটন দাস আর নাইম শেখ। প্রথম দুই ওভারে তারা তোলেন ৪ রান। তবে কাজের কাজ হয়নি।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই লিটনকে সাজঘরের পথ দেখান কোল ম্যাকঞ্চি। কিউই অফস্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ারে ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের দুর্দান্ত ক্যাচ হন টাইগার ওপেনার (১১ বলে ৬)।

এরপর ২৪ রানের ছোট একটি জুটি গড়ে উঠে নাইম আর সাকিব আল হাসানের মধ্যে। জুটিটি বড় হতে পারতো। কিন্তু সাকিব টার্নিং পিচে অদূরদর্শী কাজ করে বসেন।

অ্যাজাজ প্যাটেলকে ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার (৮ বলে ৮)। দুই বল পর টাইগারদের আরেক ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীমকেও (০) বোল্ড করে দেন প্যাটেল। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।

সেখান থেকে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর নাইম শেখ। মারমুখী না খেলে তারা দেখেশুনে এগোতে থাকেন। ৫০ বলে ৩৫ রানের সেই জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙেছে ১৫তম ওভারে, দুর্ভাগ্যজনক এক রানআউটে।

ব্লেইর টিকনারের শর্ট অব লেন্থ ডেলিভারি ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে দুই রানের জন্য দৌড় দিয়েছিলেন নাইম শেখ। কিন্তু দ্বিতীয় রানটি আর পূর্ণ করতে পারেননি।

ব্রেসওয়েলের থ্রো কিপারের হাতে পৌঁছে গেলে ডাইভ দিয়েও বাঁচতে পারেননি নাইম। ৩৫ বলে একটি করে চার-ছক্কায় গড়া টাইগার ওপেনারের ২৯ রানের ইনিংসের ইতি সেখানেই।

এর আগে নাসুম আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। নাসুম-মোস্তাফিজ দুজনই নেন ৪টি করে উইকেট।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা কিউইদের শুরুটা ভালো করতে দেয়নি বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে চাপে পড়ে সফরকারিরা। প্রথম ওভারেই বাঁহাতি এই স্পিনারকে আক্রমণে নিয়ে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

ওই ওভারের চতুর্থ বলে রাচিন রবীন্দ্রকে (০) তুলে নেন নাসুম। সুইপ করতে গিয়ে কিউই ওপেনার বল ভাসিয়ে দেন বাতাসে। শর্ট ফাইন লেগ থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ তালুবন্দী করেন সাইফউদ্দিন। ওই ওভারে এক রানও খরচ করেননি নাসুম।

সাকিব আল হাসান ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে এসে দেন ১০ রান। ফিন এলেন হাঁটু গেড়ে রিভার্স সুইপ করে অবিশ্বাস্য এক ছক্কা হাঁকান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। তবে তৃতীয় ওভারে সেই অ্যালেনকেও আউট করেছেন নাসুম।

আরেকটি রিভার্স সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এবার টাইমিং মেলাতে না পেরে মারমুখী কিউই ওপেনার (৮ বলে ১০) পয়েন্টে হন সাইফউদ্দিনের সহজ ক্যাচ। ১৬ রানে ২ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

চাপের মুখে কৌশল বদলে ফেলে সফরকারিরা। তৃতীয় উইকেটে টম ল্যাথাম আর উইল ইয়ং রানরেটের দিকে নজর না দিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তাদের থিতু হয়ে যাওয়া জুটিটি (৪৫ বলে ৩৪) একাদশতম ওভারে ভাঙেন শেখ মেহেদি হাসান।

টাইগার অফস্পিনারকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে চেয়েছিলেন ল্যাথাম। কিন্তু কিউই অধিনায়ক ঘূর্ণিবল বুঝতে পারেননি। অনেকটা সামনে এগিয়ে যাওয়া ল্যাথামকে (২৬ বলে ২১) সহজেই স্ট্যাম্পিং করেন নুরুল হাসান সোহান।

এর পরের ওভার ফের নাসুম ঝলক। এবার টানা দুই বলে দুই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখান এই বাঁহাতি। ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড করেন হেনরি নিকোলসকে (১)। পরের বলে টার্ন বুঝতে না পেরে ব্যাট পেতে দিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (০)।

টম ব্লান্ডেলকে উইকেটে থিতু হতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। ১৬তম ওভারে তার স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাট ধরে দেন ব্লান্ডেল (৪), মিডঅন থেকে দৌড়ে এসে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন নাইম শেখ। ওই ওভারেই শেষ বলে কোল ম্যাকঞ্চিকে (০) ফিরতি ক্যাচ বানিয়েছেন কাটার মাস্টার।

একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন উইল ইয়ং। তিনিই কিউইদের একশর কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। ৪৮ বলে ৪৬ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারে মোস্তাফিজের শিকার হয়েছেন এই ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল নাসুম আহমেদ। ৪ ওভারে দুটি মেইডেনসহ মাত্র ১০ রান খরচায় ৪টি উইকেট নিয়েছেন এই স্পিনার। মোস্তাফিজও নেন ৪ উইকেট। ৩.৩ ওভারে খরচ করেন ১২ রান।