মার্চ ২৯, ২০২৪

ডা. সুপ্রিয় পাল : কিডনি রোগ হল নীরব ঘাতক। প্রারম্ভিক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ কোন লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়াই দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস বা মধুমেহ এবং উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। কিডনির কর্মক্ষমতা কমতে কমতে যখন অকার্যকারিতার একটি বিশেষ স্তরে পৌঁছে যায়, তখন তাকে ‘কিডনি-ব্যর্থতা’ বা ‘কিডনি ফেলিওর’ বলা হয়। বিস্তারিত রয়েছে এ প্রতিবেদনে-ডা. সুপ্রিয় পাল

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি (বাংলায় বৃক্ক বলা হয়)। কিডনি রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে সেগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন কারণে কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে একজন মানুষ নানাবিধ শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়। এমনকি কিডনি একেবারে অকার্যকর হয়ে গেলে মৃত্যু সুনিশ্চিত। একটি অসুস্থ বা অকার্যকর কিডনির কারণে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এজন্য অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনি সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্ব কিডনি দিবস ও কিডনি সচেতনতা মাস

২০০৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতি বছর মার্চ মাসের ২য় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস উদযাপন করা হয়। এ বছর ১০ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করা হয় এবং পুরো মার্চ মাস জুড়ে কিডনি সচেতনতা মাস হিসাবে পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়-‘সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য-কিডনি সেবায় ব্যবধান পূরণ করা’। এ মাসে কিডনি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কিডনি রোগীদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও সংস্থা থেকে বিশেষ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।

কিডনি রোগের পরিসংখ্যান

প্রতি বছর প্রায় ১৯৫ মিলিয়ন মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। ক্রনিক কিডনি ডিজিস (সিকেডি) সারা পৃথিবীতে রোগজনিত কারণে মৃত্যুর মধ্যে ৬ষ্ঠতম। প্রতি বছরই প্রায় ১৭ লাখ মানুষ একিউট কিডনি ফেইলিউরের কারণে মারা যায়। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৭ হাজার মানুষ মারা যায়।

কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, কিডনির জন্য ক্ষতিকর এমন ওষুধ সেবন, জন্মগত কিডনির সমস্যা, ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব ব্যক্তি, প্রভৃতি কিডনি রোগের ঝুঁকির জন্য অন্যতম।

ক্রনিক কিডনি ডিজিস বা কিডনি রোগের উপসর্গ ও লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্রম ক্ষমতা কমতে থাকলে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। ক্ষুধামন্দা, শরীরে ওজন হ্রাস পাওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশে (হাত, পা, মুখ) পানি জমে ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, শরীরে ক্লান্তিভাব আসা, ঘুম কম হওয়া, অসুস্থ বোধ করা, শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি হওয়া, মাঝে মাঝেই মাথাব্যথা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ ক্রনিক কিডনি ডিজিসের শেষ পর্যায়ে প্রকাশ পেতে শুরু করে।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়

কিডনি রোগের অন্যতম ঝুঁকির কারণ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ। সুতরাং যাদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ওষুধ সেবন করা বাধ্যতামূলক, যেন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকে।

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমিয়ে ফেলতে হবে। যারা ধূমপান করে, তাদের জন্য ধূমপান ত্যাগ করার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। খাবার পাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। রক্তে কলস্টেরল যেন সবসময় স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। প্রতিদিন বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তবে যাদের কিডনি রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ না করে ফলমূল খাওয়া যাবে না। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং রুটিন চেকআপ করানো আবশ্যক।

লেখক : ট্রেইনি রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট, সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট একশন (ক্রিডা), করপোরেট সেফটি অফিসার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি.।