এপ্রিল ২৬, ২০২৪

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহরে সেনা সদস্যদের গুলিতে ২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি নিউজ পোর্টাল।

মিয়ানমার নাও-র তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে রুবি খনির শহর হিসেবে পরিচিত মোগোকে এ গুলির ঘটনা ঘটে।

এ নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে চলমান আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ২৩৭ এ দাঁড়াল বলে অ্যাস্টিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স জানিয়েছে।

সামরিক জান্তার সব রকমের নিপীড়ন নির্যাতন উপেক্ষা করে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থিরা তাদের অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে; শনিবারও তাদের বিক্ষোভের পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দেশটিতে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তার ওপর আন্তর্জাতিক চাপও দিন দিন বাড়ছে; পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি এখন এশিয়ার অনেক দেশও মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিন্দা জানাচ্ছে।

শুক্রবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘বর্বর সহিংসতা অব্যাহত’ রাখায় নিন্দা জানিয়েছেন।

“এর বিরুদ্ধে দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দরকার,” গুতেরেস এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।

জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক র‌্যাপোর্টার মিয়ানমারে জনগণের ওপর জেনারেলদের নির্দয় আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পাস হয়েছে।

ইয়াংগনে চীনা মালিকানাধীন কিছু কারখানায় অগ্নিসংযোগের পর হ্লাইং থারিয়ারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কয়েকদিনে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘অনৈতিক এবং পুরোপুরি অযৌক্তিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন মিয়ানমারে অবস্থিত পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা।

“ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এবং গণমাধ্যমের উপর দমনপীড়ন চালিয়ে সেনাবাহিনীর এ ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড আড়াল করা যাবে না,” শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন তারা।

নিরাপত্তা বাহিনীকে মোকাবেলায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির অনেক আন্দোলনকারী কৌশলও পাল্টে ফেলেছেন।

“আমরা সেখানেই বিক্ষোভ দেখাই যেখানে পুলিশ বা সেনাবাহিনী নেই। যখনই শুনি তারা আসছে, আমরা সরে যাই। আমি আর আমার এক সাথীকেও হারাতে চাই না; কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না বিপ্লব সম্পন্ন হয়, আমরা যে কোনো উপায়েই হোক না কেন বিক্ষোভ করবো,” বলেছেন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাওয়েইয়ের কেয়াও মিন হতাইকে।

শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভের পাশাপাশি আলো জ্বালিয়েও অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ জানিয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্যরা সাধারণত একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা না বললেও মিয়ানমারে অব্যাহত সহিংসতার ঘটনায় এখন অনেককেই মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, তিনি আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান ব্রুনেইয়ের সুলতার হাসানাল বলকিয়াহকে জোটের জরুরি বৈঠক ডাকতে অনুরোধ করবেন।

“মিয়ানমারে যেন আর হতাহতের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সেখানে সহিংসতা বন্ধে আহ্বান জানাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। মানুষের কল্যাণ ও নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত,” বলেছেন উইদোদো।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেছেন, নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহারে তিনি স্তম্ভিত।

ফিলিপিন্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেওদোরো লোকসিন বলেছেন, মিয়ানমারের ঘটনায় আসিয়ানের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

মিয়ানমারে সহিংসতা এবং অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে সিঙ্গাপুরও; তারা নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচিকে ছেড়ে দিতেও আহ্বান জানিয়েছে।